পড়াশুনার মাঝেই তৈরী হয়েছে আরেকটি লাইফ "অনলাইন লাইফ " ব্লগার মারুফ এর সাক্ষাতকার




ব্লগার মারুফ যার আসল নাম আব্দুল্লাহ আল মারুফ । অনেকেই উনার লিখা পড়েছেন । চলুন উনার সাথে আমাদের লাইফ স্টোরি টিমের সাক্ষাতকার এর কিছু কথাবার্তা দেখে নেই ।



লাইফ স্টোরি : আপনাকে আমরা অনেকেই ব্লগার মারুফ নামে চিনি , আচ্ছা ব্লগার কেন লাগালেন নামের আগে ?

ব্লগার মারুফ : আমি লেখালেখি করার জন্য একটা ব্লগ সাইট খুলতে চাচ্ছিলাম এক সময়। আমাকে এক নামে সবাই চিনবে। কিন্তু শুধু মারুফ নামটা হয়ত কমন হয়ে যায়। কিছু একটা খুঁজছিলাম। হঠাৎ কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই ব্লগার লাগিয়েছিলাম। অবশ্য ব্লগার লাগাতাম না যদি কিনা আরও একটু বেশী চিন্তা করতাম ।

লাইফ স্টোরি : এমনিতেই আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল আপনাকে কি নামে ডাকে ?

ব্লগার মারুফ : আমাকে মারুফ নামেই ডাকে। তবে কিছু ফ্রেন্ডস ব্লগার মারুফ না ডেকে ব্লগার বলে ডেকে মজা করে।

লাইফ স্টোরি : আপনি এখন কিসে পড়ছেন ? স্কুল , কলজে লাইফ কোথায় কাটিয়েছেন ?

ব্লগার মারুফ : গত ১ মার্চ থেকে আমি ভার্সিটি লাইফ শুরু করেছি। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস নিয়ে পড়াশুনা করছি। সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছি আর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি।

লাইফ স্টোরি : আপনার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি ? ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড

ব্লগার মারুফ : আমার বাবা-মা, দুই ভাই-ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজি এবং দাদী আছেন। আমি তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট এবং অনেক আদরের। বোন নেই।

লাইফ স্টোরি : ব্লগিং জগত এ কিভাবে আসা আপনার ?

ব্লগার মারুফ : অষ্টম শ্রেনীর শেষের দিকে একটা ব্লগস্পট ব্লগ খুলেছিলাম। আমার অভ্যাস ছিল অনলাইনে যা শেখা তা অন্যকেও শেখানো। সেজন্যই ব্লগটা খুলেছিলাম। যা জানতাম তাই লিখতাম। এভাবেই ব্লগিং শুরু করা। তবে ব্লগিং জগতে আসার আগে টেকটিউনস পড়তাম দীর্ঘদিন। সেখানে সবার লেখা দেখেই আমিও এই জগতে ঢুকি।

লাইফ স্টোরি : অনেক ছোট থেকেই ব্লগিং এ , তো এইসব করতে গিয়ে পড়ালেখায় কোন সমস্যা হইয়েছে আপনার ?

ব্লগার মারুফ : হ্যাঁ, বলতে গেলে অনেক বেশী সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আপনারা জানেন, সম্প্রতি আমি প্রায় ব্লগিং ছেড়েই দিয়েছি। এর পিছনে অন্যতম কারণ পড়াশুনা। ব্লগিং লাইফের শুরুতেই প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এসএসসিতে অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতে আমি সেটায় জিপিএ ৫ পেয়েছি। কিন্তু পরে এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল কিছুটা খারাপ হওয়ার পিছনে আমার ব্লগিং লাইফ পুরাটা দায়ী। এর পর থেকে ধীরে ধীরে ব্লগিং ছেড়ে দেয়ার চেস্টা করেছি।

লাইফ স্টোরি : অনলাইন লাইফ এর আপনার সবচেয়ে বড় সফলতা কি ?

ব্লগার মারুফ : অন্তত কিছু লোক হলেও আমাকে একটি নামে চেনে। এটি আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই স্বপ্নটা দীর্ঘদিন ধরে লালন করেছিলাম। পুরোটা না হলেও স্বপ্নের প্রাথমিক বাস্তবায়ন আমি করতে পেরেছি।

লাইফ স্টোরি : অনলাইন লাইফ এর কোন সময় টা আপনার সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল ?

ব্লগার মারুফ : অনলাইন জগতে কাজ করে এরকম সবার কাছেই সবচেয়ে খারাপ সময় হলো প্রায়ই কিছু লোক আজেবাজে মন্তব্য করে। আমার ক্ষেত্রেও ঐ সময়গুলা সবচেয়ে খারাপ সময়। প্রায় প্রতিদিনই এরকম সময়ের সম্মুখীন হয়েছি। টেকনোলজি বিষয়ে যারা ব্লগিং করেন তাদের কাজটাই মূলত অন্যকে সেই বিষয়ে হেল্প করা। তবে সবসময় সেটা বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠেনা। আর একারণেই কিছু লোকের বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। ঠিক ঐ সময়গুলা অনলাইন জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবে মনে হয়। অবশ্য অনলাইন জীবনটাকে যখন সম্প্রতি সমাপ্তি করার চেস্টা করেছি ঠিক সেই সময়টা আরও বেশী খারাপ সময় হিসেবে মনে হয়েছে।

লাইফ স্টোরি : আমাদের জানা মতে টেকটিউন্স এ আপনি টপ ব্লগার , তো এখন কেন ব্লগিং করেন না ?

ব্লগার মারুফ : আসলে ইতিমধ্যে ব্লগিং লাইফের সমাপ্তি করার কারণগুলো জানিয়েছি। তবে আরেকটি কারণ জানিয়ে রাখি, আমার বাংলা ব্লগিং না চালিয়ে যাওয়ার পিছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে তা হলো অর্থ। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ব্লগিং সেক্টরটায় শুধু শখের বসেই সবাই আছে। আমিও ভালো লাগা থেকে এবং শখের বশে শুরু করেছিলাম। নিজের সময়, অর্থ ব্যয় করে লেখালেখি করেছি। কিন্তু এক সময় অর্থ সমস্যা আমার কাছে একটি বড় সমস্যা হিসেবে সামনে দাঁড়িয়েছিল। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালেই দেখা যায় তাদের ব্লগিং সেক্টরটা কতটা প্রফিটেবল। আর্থিক সমস্যার কারণে আমি পড়াশুনার পাশাপাশি ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে পার্ট টাইম কাজ শুরু করেছি। নিজের প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট একটা আইটি ফার্মও পরিচালনা করতে হয়। এসব মিলিয়ে বাংলা ব্লগিং করার সময়টা হয়ে উঠে না। তবে আমি টেকটিউনসের কাছে চির কৃতজ্ঞ। টেকটিউনস আজ আমাকে এই পজিশন দিয়েছে।

লাইফ স্টোরি : আপনার মতে যারা ব্লগিং লাইফ এ আসতে চায় তাদের সম্পর্কে আপনি কি বলবেন ? তাদের কি করা উচিৎ ?

ব্লগার মারুফ : তাদেরকে প্রথমেই বলব, ব্লগিং শুরু করার পূর্বে ব্লগিং করার উদ্দেশ্যটি আগে প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে। নতুবা তাদের সমাপ্তি হয়ত আমার মতই হবে!

লাইফ স্টোরি : ইন্টারনেট থেকে আপনার এই পর্যন্ত কোন আর্ন হইছে ? যদি হয়ে থাকে তাহলে তার পরিমাণ কত ?

ব্লগার মারুফ : আগেই বলেছি, বাংলা ব্লগিং সেক্টরটা যেহেতু অর্থ উপার্জনের উপযোগী নয়। তাই এই সেক্টর থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে তেমন আয় হয়নি। কিন্তু ব্লগিং আমাকে যে নাম এবং পরিচয় দিয়েছে তা দিয়ে অন্যান্য কিছু আইটি বিষয়ক সার্ভিস দিয়ে আয় করেছি এবং এখনও করছি। অর্থের পরিমাণটি উল্লেখ করতে চাচ্ছিনা। তবে এটুকুই বলব, বাংলা ব্লগিং আমাকে প্রত্যক্ষভাবে কোন ইনকাম দেয়নি তবে পরোক্ষভাবে অনেক দিয়েছে এবং সেই সুবাদে এখনও আয় করছি।

লাইফ স্টোরি : তো আপনি এখন কি করছেন ?

ব্লগার মারুফ : সমাধান আইটি (http://www.somadhanit.com) নামে আমার আইটি ফার্মটি পরিচালনা করছি। তবে জানিয়ে রাখি, আর্থিকভাবে প্রস্তুত হয়ে খুব শীঘ্রই সমাধান আইটির বাংলা ব্লগটি শুরু করব। এবার শুরু করলে ইনশাল্লাহ পিছুটান দিব না। আর পড়াশুনাটাই এখন মূল কাজ হিসেবে করছি।

লাইফ স্টোরি : আপনার লাইফ এর এইম কি ? আপনি কি হতে চান ? কি করতে চান ?

ব্লগার মারুফ : অবশ্যই প্রথমত একজন ভালো মানুষ। তবে দ্বিতীয় স্বপ্ন হলো, উদ্যোক্তা হিসেবে বিলিয়ন ডলারের মালিক হওয়া। টেকনোলজি সেক্টরে বিজনেস করে সেরা উদ্যোক্তা হওয়া। বিলগেটস, মার্ক জাকারবারগ এখন যা করছেন আরকি! তবে অবশ্যই বিলগেটসের চেয়ে বড় অবস্থানে গেলেই আমার এইমটি পূরণ হবে।

লাইফ স্টোরি : আমরা কি ব্লগার মারুফ কে আবার ব্লগিং লাইফ এ ফিরে পাব ?

ব্লগার মারুফ : না! ব্লগার মারুফ কে হয়ত না! তবে মারুফ -কে হয়ত পেতে পারেন! এবার বাংলা ব্লগিং জগতে নাম লেখালে ব্যক্তিগত ব্লগ নিয়ে না, টেকটিউনসের মত কমিউনিটি ব্লগিং প্লাটফর্ম নিয়ে হয়ত ফিরে পেতে পারেন আপনাদের মারুফ কে!

লাইফ স্টোরি : আচ্ছা আপনার লাইফ সম্পর্কে ছোট করে জানতে চাচ্ছি ,

ব্লগার মারুফ : আমি মারুফ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছি। শারীরিকভাবে অক্ষম করলেও আল্লাহ আমাকে মেধা দিয়েছেন এটা আমি গর্বের সাথে বলতে দ্বিধা করিনা। বাসার পাশের প্রাইমারী স্কুল থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া, এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া আর সবশেষে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৩ নিয়ে এইচএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে যুদ্ধ করে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাওয়া। এটুকুই আমার জীবন। আর পড়াশুনার মাঝেই তৈরি হয়েছিল আরেকটি লাইফ সেটি হল "অনলাইন লাইফ"। জানিয়ে রাখি, আমি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে না পারায় ঘর কেন্দ্রিক কাজ আর পড়াশুনাটাই করি। তাই বাহিরের জীবনটাকে খুব বেশী দেখতে পারিনি। এই পর্যন্ত এটুকুই আমার জীবন। মাঝে মাঝে পেয়েছি কিছু সফলতা। এই আরকি!

লাইফ স্টোরি : আমাদের সম্পর্কে আপনি কিছু বলতে চান ? আমাদের কাজ সম্পর্কে , লাইফ স্টোরিকে কিছু বলবেন ? আমারা কিভাবে কি করতে পারি ?

ব্লগার মারুফ : সত্যিই আপনাদের উদ্যোগটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। জীবনের প্রথম ইন্টারভিউটা দিচ্ছি আপনাদের। তাই ভালোলাগা একটু বেশীই। ভবিষ্যৎ জীবনে যদি প্রতিষ্ঠিত হতে পারি তখন অন্য কোন মিডিয়াকে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় লাইফ স্টোরি ডট ইনফো সাইটটার কথা প্রথমেই মনে হবে! চালিয়ে যান! অনলাইন প্রফেশনের সাথে যুক্ত প্রত্যেকের স্টোরি জানতে চাই লাইফ স্টোরি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল আপনাদের জন্য

লাইফ স্টোরি : আমাদের সাথে থেকে আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ ...

ব্লগার মারুফ : আপনাদেরও ধন্যবাদ।





ফেইসবুকে আমাদের সাইট ও গিকদের স্টোরি পেতে লাইক দিন আমাদের ফেসবুক পেইজে , আপনাদের কিছু জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পাড়েন ফেইসবুক পেইজ এর মাধ্যমে

Find Us On Facebook



1 comment

  1. সবসময় শুভ কামনা থাকবে। সেই শিক্ষক - অসময়ের পথিক।

    ReplyDelete

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Start typing and press Enter to search